অরুণেন্দু দাস- পরিচয়




তাঁর সম্পর্কে গৌতম চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন "অরুণদা সেই কবেকার আগেকার এক নাগরিক চারণ। আমাদের সব্বার আগে, ঘোড়াদেরও আগে এগিয়েছিল তাঁর গান।" হ্যাঁ, সেই ১৯৫৬-৬১ সালে হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা অধ্যুষিত বাংলা গানের জগতে গিটার সহযোগে গান বাঁধতে শুরু করেন অরুণেন্দু দাস। সেসময় তিনি শিবপুর বিই কলেজের আর্কিটেকচারের ছাত্র, পাশাপাশি শিখছেন গিটারও। গিটার বাজানো শিখতে গিয়েই বিদেশী গানের প্রেমে পড়া এবং নিজে নিজে গান লেখার দুঃসাহস। তাঁর কথামতই, "গানগুলো রচিত হয়েছিল গীটারের ওপর আঙুল চালানোয় পারদর্শিতা অর্জনের উদ্দেশ্যে"। নতুন ধারার বাংলা গানের ধারণা তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। এর পর ষাটের দশকের শেষে ইংল্যান্ড, তখন ফোক রিভাইভালের অভিঘাতে আচ্ছন্ন গোটা বিশ্ব। অরুণেন্দুও অবিলম্বে হয়ে গেলেন একটি ফোক ক্লাবের সদস্য। তাঁর অধিকাংশ গান এ সময়েই লেখা। সাতের দশকের প্রথমে তিনিই সর্বপ্রথম বব ডিলানের "Blowin’ in the Wind" গানের বাংলা করেন "আরও কত পথ বলো হাঁটলে মানুষ/ তবে সে মানুষ হবে?"

অরুণেন্দু তখন

অরুণেন্দুর গানগুলো বিই কলেজের পরবর্তী প্রজন্মর কাছে জনপ্রিয় হয় অরুণেন্দুর মামাতো ভাই এবং নিজগুণে বিখ্যাত গিটার শিল্পী প্রশান্ত দে (ওরফে হাবুল। যাঁকে নিয়ে অরুণেন্দুর গানও আছে, "আগে জানলে কি হাবুল/ কেউ করে এমন ভুল")-র হাত ধরে। কলেজে প্রশান্তবাবুর এক বছরের সিনিয়র ছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ভাই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় অরুণেন্দু লং ডিস্ট্যান্স কলে বা চিঠিতে লিখে গান পাঠাচ্ছেন আর প্রশান্ত সেই গান তুলে নিচ্ছেন। প্রশান্তর সাথে প্রতিদ্বন্দীতায় শুধু জমায়েতে শুনে শুনে সেই গান তুলে নিচ্ছেন প্রদীপও। বিই কলেজের ছাত্রদের মুখে মুখে ঘুরতে থাকা এই 'অরুণদার গান' শুনেই গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৬-৮৭র কোনও সময়ে যোগাযোগ করেন অরুণেন্দুর সাথে। তারই ফলশ্রুতি ১৯৯৫ সাল থেকে '৯৯ সাল অবধি মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত চারটি অ্যালবামে সঙ্কলিত হওয়া অরুণেন্দুর গানগুলি। আর সে কী সব গান! "ভিক্ষেতে যাব", "দিশেহারা যে মোর মন", "গঙ্গা", "যাস কোথা তুই, কীসের এত তাড়া", "তোরা কে কে যাবি রে", "ভালোবাসি তোমায়, তাই জানাই গানে", "সারা রাত"... অথচ এসব গান কোনওদিনই নিজে রেকর্ড করেন নি অরুণেন্দু। করতে চানও নি। গানকে যিনি চিরকাল মনে করেছেন ব্যক্তিগত সাধনা তাঁর কীই বা প্রয়োজন প্রকাশিত হওয়ার? যতদূর মনে পড়ছে ২০০৪ সালে প্রেস্টো স্টুডিও থেকে তাঁর একমাত্র অ্যালবাম অরুণদার গান মুক্তি পায়, এ ছাড়া তাঁর গানের আর কোনও সঙ্কলন খুব সম্ভবত নেই।

অরুণেন্দু এখন

প্রায় আশি ছুঁয়েও, নতুন ধারার বাংলা গানের এই পথিকৃৎ এখনও বাঁধছেন নতুন নতুন গান। আর কী ভাগ্য আমাদের, কখনও কখনও আমরা তা শুনতেও পাচ্ছি। যুগ যুগ জিয়ে, অরুণদা!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন